কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা, অসুবিধা এবং পড়াশোনার খরচ
উচ্চ শিক্ষার জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দেশ। দেশটি উচ্চ শিক্ষা এবং সংস্কৃতির কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে। তবে, কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা পেয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে সুবিধা এবং অসুবিধা উভয়ই রয়েছে। চলুন, সম্পূর্ণ ব্লগে বিস্তারিত আলোচনা করি।
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা রয়েছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়তা করে। কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বলা হল।
১। উচ্চমানের শিক্ষা ও বৈচিত্র্যময় কোর্স
কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অনেক রকমের বিষয় পড়ানো হয়, যা শিক্ষার্থীদের পছন্দ অনুযায়ী কোর্স নির্বাচনের সুযোগ রাখে। বিশেষ করে প্রযুক্তি, ব্যবসা, স্বাস্থ্যবিজ্ঞান এবং আর্টস-এর ক্ষেত্রে কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বজুড়ে সমাদৃত।
আরো পড়ুন: কানাডার প্রদেশ কয়টি, কানাডার আয়তন কত, কানাডা রাজধানীর নাম কি জেনে নিন
২। আংশিক কাজের সুযোগ
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। এটি শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, ছুটির সময় ফুল টাইম কাজ করা যায়।
৩। পোস্ট-গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট (PGWP)
কানাডায় পড়াশোনা শেষ করার পর শিক্ষার্থীরা পোস্ট-গ্রাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট (PGWP) সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা তাদের ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত কানাডায় কাজ করার সুযোগ দেয়। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
আরো পড়ুন: কানাডা ডলার রেট ২০২৪ (বর্তমান রেট), কানাডা ১ টাকা সমান বাংলাদেশের কত টাকা
৪। নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশ
কানাডা সাধারণত শান্তিপূর্ণ, সুন্দর ও মনোরম দেশ হিসেবে পরিচিত। শিক্ষার্থীরা একটি নিরাপদ ও সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বস্তি এবং একাডেমিক উন্নতিতে সহায়ক।
৫। ইমিগ্রেশনের সুযোগ
কানাডা শিক্ষার্থীদের ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে সহজ ক্ষেত্র প্রদান করে। পড়াশোনা শেষে কাজের অভিজ্ঞতা লাভের পর শিক্ষার্থীরা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবেদন করতে পারেন।
আরো পড়ুন: কানাডা থেকে বাংলাদেশ আসতে কত সময় লাগে, বাংলাদেশ থেকে কানাডা সর্বমোট দূরত্ব
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার অসুবিধা
যদিও কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় অনেক সুবিধা রয়েছে কিন্তু সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান যেগুলো শিক্ষার্থীদের জানা উচিত।
১। ভিসা প্রক্রিয়া জটিলতা
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং শর্ত পূরণ করা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন হতে পারে। এছাড়াও, ভিসা প্রক্রিয়ার সময় কিছু অতিরিক্ত খরচ এবং বাড়তি সময় লাগে।
আরো পড়ুন: কানাডা থেকে বাংলাদেশের সময় এর পার্থক্য , বাংলাদেশ টাকা পাঠানোর জন্য সঠিক নিয়ম
২। জীবনযাত্রার জন্য বেশি ব্যয়
কানাডায় টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভার এবং মন্ট্রিয়াল এগুলোর মত বড় শহরগুলোতে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক ভাবে বেশি। বাসস্থান, খাদ্য এবং যাতায়াতের খরচ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে।
৩। আবহাওয়া
কানাডার শীতকাল অত্যন্ত ঠান্ডা এবং বরফে ঢাকা। শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঠান্ডা পরিবেশে অভ্যস্ত হওয়া কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যারা গ্রীষ্মপ্রধান দেশ থেকে আসে।
আরো পড়ুন: IELTS ছাড়া কি কানাডা যাওয়া যায় এবং কানাডায় যেতে হলে সর্বনিম্ন কত পয়েন্ট লাগে
৪। মানসিক চাপ ও বিচ্ছিন্নতা
বিদেশে পড়াশোনা করা এবং পরিবার থেকে দূরে থাকা অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। এছাড়াও, নতুন পরিবেশ এবং সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে কিছু শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়তে পারে।
কানাডায় পড়াশোনার খরচ
কানাডায় পড়াশোনার খরচ অনেকাংশে নির্ভর করে আপনি কোন প্রদেশ বা শহরে পড়াশোনা করছেন, কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন এবং কোন কোর্স করছেন সেগুলোর ওপর। তবুও, একটি আনুমানিক ধারণা পেতে নিচের তথ্যগুলো জেনে নেওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন: মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে, স্টুডেন্ট ভিসায় মাল্টা যেতে কত টাকা লাগে , কাজের চাহিদা
১। টিউশন ফি
অনার্স প্রোগ্রাম: প্রতি বছর টিউশন ফি প্রায় ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ কানাডিয়ান ডলার (CAD)।
মাস্টার্স প্রোগ্রাম: প্রতি বছর টিউশন ফি প্রায় ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কানাডিয়ান ডলার হতে পারে।
২। বাসস্থানের খরচ
কানাডায় থাকার খরচ শহর ভেদে ভিন্ন। বড় শহরগুলোতে মাসিক বাসস্থান খরচ ৭০০ থেকে ১৫০০ কানাডিয়ান ডলার হতে পারে। ছোট শহরে খরচ তূলনামূলক কম। বাসা ভাড়া ছাড়াও পানির বিল, বিদ্যুৎ বিল এবং ইন্টারনেট বিলের খরচও যোগ হয়।
আরো পড়ুন: বাংলাদেশে ডলারের দাম কত (লাইভ প্রাইস চার্ট), ১ ডলারে বাংলাদেশের কত টাকা জানুন
৩। খাদ্য এবং অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ
খাদ্য, পরিবহন এবং অন্যান্য দৈনন্দিন খরচ হিসেবে মাসিক প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০ কানাডিয়ান ডলার খরচ হতে পারে। যেসব শিক্ষার্থী বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তারা খাওয়ার খরচ বাঁচাতে নিজেই রান্না করেন।
৪। স্বাস্থ্যবীমা
কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক। এই বীমার খরচ প্রায় প্রতি বছর ৬০০ থেকে ১,০০০ কানাডিয়ান ডলার হতে পারে।
উপসংহার
কানাডায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার আগে স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা, অসুবিধা এবং পড়াশোনার খরচ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, আজকের এই পোস্ট থেকে আপনারা কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা, অসুবিধা এবং পড়াশোনার খরচ সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ ধারণা পেয়েছেন।