আমেরিকার গ্রীন কার্ড কি

আমেরিকার গ্রীন কার্ড কি
অনেকের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ হলো আমেরিকার গ্রীন কার্ড। এটি শুধুমাত্র একটি বৈধ বসবাসের অনুমতিপত্র নয়, বরং একজন অভিবাসীর জীবনে স্থায়ীত্ব ও নিরাপত্তার প্রতীক। তবে, গ্রীন কার্ড পেতে প্রয়োজন সঠিক পদ্ধতি এবং নীতিমালার যথাযথ অনুসরণ।

এই আর্টিকেলে আমরা জানবো আমেরিকার গ্রীন কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, এর আবেদন প্রক্রিয়া, সময়কাল এবং নাগরিকত্বের সঙ্গে এর পার্থক্য। যারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন, তাদের জন্য এই গাইড বিশেষভাবে উপকারী হবে।

আমেরিকার গ্রীন কার্ড কি

আমেরিকার গ্রীন কার্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস, যা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার বৈধতা দেয়। এটি স্থায়ী বাসিন্দার (Permanent Resident) প্রমাণপত্র হিসেবে কাজ করে। গ্রীন কার্ড পাওয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক নিরাপত্তার সুযোগ পেতে পারেন।

তবে, গ্রীন কার্ডধারীরা নাগরিক নন। তাদের ভোটাধিকার নেই এবং কিছু সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতে পারেন না। এটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের অনুমতি প্রদান করে।

আমেরিকায় গ্রিন কার্ড পাওয়ার উপায়

আমেরিকায় গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। পারিবারিক সম্পর্ক, কর্মসংস্থান, ডাইভারসিটি ভিসা, শরণার্থী হিসেবে আবেদন বা বিনিয়োগের মাধ্যমে গ্রীন কার্ড পাওয়া যায়।

যদি কারো পরিবারের সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হন, তাহলে তিনি পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আবেদন করতে পারেন। এর মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী, বাবা-মা এবং সন্তানরা সাধারণত অন্তর্ভুক্ত থাকে।

কর্মসংস্থানের ভিত্তিতে পেশাদার বা দক্ষ শ্রমিকরা গ্রীন কার্ড পাওয়ার যোগ্য হতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন বা চাকরির প্রস্তাব পেলে এটি পাওয়ার সুযোগ থাকে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য ডাইভারসিটি ভিসা লটারি অন্যতম উপায়। এটি একটি লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়, তবে বাংলাদেশ বর্তমানে এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

যারা রাজনৈতিক বা মানবিক কারণে নিজ দেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরও নির্দিষ্ট শর্তে গ্রীন কার্ড দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগের মাধ্যমে বা বিশেষ যোগ্যতার জন্যও এটি পাওয়া সম্ভব।

আমেরিকার গ্রিন কার্ড পেতে কত সময় লাগে

গ্রিন কার্ড প্রাপ্তির সময়কাল আবেদন পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে। পারিবারিক ভিত্তিতে নিকটাত্মীয়দের জন্য অপেক্ষার সময় কম (১-৩ বছর)। তবে, দূরসম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি ৫-১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে। কর্মসংস্থান ভিত্তিক গ্রীন কার্ড সাধারণত ১-৫ বছরের মধ্যে পাওয়া যায়।

ডাইভারসিটি ভিসা প্রক্রিয়া তুলনামূলক দ্রুত সম্পন্ন হয়। নির্বাচিত হলে ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে এটি পাওয়া সম্ভব। শরণার্থী হিসেবে আবেদন করলে দ্রুততম সময়ে গ্রীন কার্ড প্রাপ্তি সম্ভব হয়।

তবে, প্রক্রিয়াটি নির্ভর করে অভিবাসন নীতির পরিবর্তন, সঠিক কাগজপত্র এবং সরকারি বিভাগের কার্যক্ষমতার ওপর।

আমেরিকার নাগরিকত্ব ও গ্রিন কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি

গ্রিন কার্ডধারী এবং নাগরিকদের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো অধিকার এবং সুবিধা। গ্রীন কার্ডধারীরা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করতে পারেন, তবে তাদের ভোটাধিকার নেই। তারা গুরুতর অপরাধ করলে দেশে ফেরত পাঠানো হতে পারে।

অন্যদিকে, নাগরিকদের ভোটাধিকারসহ সকল নাগরিক সুবিধা ভোগ করার সুযোগ রয়েছে। তারা কোনো অপরাধ করলেও নির্বাসনের ঝুঁকিতে থাকেন না। নাগরিকরা সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন।

তবে, গ্রীন কার্ডধারীরা পাঁচ বছর পর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সুযোগ পান।

আমেরিকার গ্রিন কার্ড ফি কিভাবে দিতে হয়

গ্রীন কার্ডের জন্য নির্ধারিত ফি রয়েছে, যা অনলাইন বা অফলাইন উভয় পদ্ধতিতে পরিশোধ করা যায়। আবেদনকারী প্রথমে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করেন এবং এরপর পেমেন্ট করেন।

অনলাইনে ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে পেমেন্ট করা যায়। অফলাইনে চেক বা মানি অর্ডারের মাধ্যমে ফি জমা দেওয়া যায়। ফি’র পরিমাণ পদ্ধতি ও আবেদন প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে। ২০২৫ সালের হিসাবে এটি $১,২০০ থেকে $১,৫০০ পর্যন্ত হতে পারে।

সর্বশেষ কথা

যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীন কার্ড হলো স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ার প্রথম ধাপ। এটি একজন অভিবাসীর জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে। গ্রীন কার্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যায়।

তবে, এটি পাওয়ার জন্য ধৈর্য, সঠিক কাগজপত্র এবং অভিবাসন নীতিমালার প্রতি সম্মান অত্যন্ত জরুরি। সঠিক নিয়ম মেনে চললে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলে সহজেই গ্রীন কার্ড পাওয়া সম্ভব।
এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন
পূর্বের আর্টিকেল দেখুন পরবর্তী আর্টিকেল দেখুন
এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি
মন্তব্য করুন
comment url

আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করুন
হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেল জয়েন করুন